চরমোনাই খানকাকেন্দ্রিক বহুমুখী ঈমানি আন্দোলন: জহির উদ্দিন বাবর

ইসলামের নামে সব তন্ত্রমন্ত্র ও ভণ্ডামির মোকাবেলায় চরমোনাইওয়ালারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। বৃহৎ আঙ্গিকে চরমোনাই ধারা সে কাজটি করে যাচ্ছে। হযরত মাওলানা ইসহাক রহ.-এর মাধ্যমে সূচিত এই ধারা হযরত মাওলানা ফজলুল করিম রহ.-এর মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে বিস্তৃতি লাভ করেছে। বিভিন্ন সময় ভণ্ড পীরদের মোকাবেলায় এদেশে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছেন চরমোনাইয়ের অনুসারীরা। ইসলামী আন্দোলন-সংগ্রাম, দাওয়াত, তালিম ও তাযকিয়ার সমন্বিত এই ধারার মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন এদেশের লাখো মুসলমান। বিশেষ করে, সাধারণ মুসলমানদেরকে দ্বীনের পথে আনার ক্ষেত্রে চরমোনাইয়ের কোনো বিকল্প নেই।

এদেশের মানুষ ধর্মপ্রিয় ও ধর্মভীরু। প্রকৃতিগতভাবেই আমাদের দেশের মুসলমানদের মধ্যে দ্বীনের প্রতি আলাদা শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে। কিছু ব্যতিক্রম বাদে ধর্মীয় স্পৃহা মোটামুটি এদেশের প্রতিটি মুসলমানের অন্তরেই জাগ্রত আছে। বর্তমান বিশ্বে নৈতিক স্খলন ও অধঃপতন যে হারে বাড়ছে সে অনুপাতে এখনো আমাদের সমাজব্যবস্থায় তা আঘাত করতে পারেনি। এমনকি আরব বিশ্বকে পর্যন্ত নৈতিক ও ধর্মীয় স্খলন যেভাবে দ্রুত গ্রাস করছে সে তুলনায় আমাদের দেশের অবস্থা অনেক ভালো। এখানকার মুসলমানদের ধর্মীয় আবেগ শ্রদ্ধা করার মতো। ব্যক্তিজীবনে ধর্মকর্মে ততটা অগ্রসর না হলেও অন্তত সবার মধ্যে ঈমানি জ্বলন অনুভব করা যায়। সারা সপ্তাহ না হলেও অন্তত শুক্রবারে মসজিদগুলো মুসল্লিতে ঠাসা হয়ে ওঠে। আল্লাহ ও রাসূলের শানে কোনো বেয়াদবি হলে মসজিদ-মাদরাসার বারান্দায় না আসা একজন সাধারণ মুসলমানও প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। ওয়াজ মাহফিলগুলোতে থাকে মুসলমানদের উপচেপড়া ভিড়। রমজানের পুরো মাসজুড়ে জান্নাতি আবহ বিরাজ করে প্রতিটি মুসলিম পরিবারে। আধুনিক উচ্চ শিক্ষিত একজন নারীও আযানের সময় অন্তত মাথায় ঘোমটা টানেন। মুখে দাড়ি আর গায়ে সুন্নতি পোশাক থাকলে প্রায় সবাই তাকে সম্মান করেন, সালাম দেন। দ্বীনের জন্য এখনও মানুষ উদারহস্তে দান-সদকার করেন। মোটাদাগে এদেশের মুসলমানদের এই যে ধর্মীয় ভাবাবেগ তা আমাদের কাছে গুরুত্ব না পেলেও বাইরের রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে অনেক বড় প্রাপ্তি। পশ্চিমা কালচার আমাদের সমাজব্যবস্থায় তিলে তিলে বাসা বাঁধলেও অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় এখনো অবস্থা অনেক ভালো।

ধর্মীয় এই স্পহা ও অনুভব এদেশে একদিনে গড়ে ওঠেনি। আমাদের মুসলমান সমাজকে পরিশুদ্ধ ও নৈতিকতায় ঋদ্ধ করতে যুগে যুগে কাজ করেছেন আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখ। এদেশে ইসলাম আসার সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হলো পীর-আউলিয়া। সুদূর আরব থেকে সেই ইসলামের সূচনাকালে এদেশে এসেছেন অনেক পীর-ওলী-দরবেশ। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এদেশের বুকে ইসলাম নামক বৃক্ষটি তারা রোপন করেছেন; পরিচর্যায় সজীব করে তুলেছেন। এদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে মিশে আছে ইসলাম। আর এর সবচেয়ে বড় অবদানটি হলো পীর-আউলিয়াদের খানকার। তারা এদেশের মুসলমানদেরকে নৈতিক শিক্ষায় সমৃদ্ধ করেছেন। হাক্কানী ধারার পীর-মাশায়েখদের উসিলায় কত যে পথভোলা মানুষ সঠিক পথের সন্ধান পেয়েছেন তার কোনো হিসাব নেই। আজ দেশের প্রতিটি প্রান্তে গড়ে ওঠেছে মসজিদ, মাদরাসা, দ্বীনি পরিবেশ। যোগ্য কোনো হক্কানী আলেম নেই-এমন গ্রাম-মহল্লা আজ বাংলাদেশে খোঁজে পাওয়া যাবে না। তাছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে দ্বীন শেখা এখন অনেকটা সহজ হয়ে গেছে। একটা সময় তা ছিল না। মানুষ দ্বীন শেখার জন্য দ্বারস্ত হতেন পীর-মাশায়েখদের। খানকাকেন্দ্রিক তালিমি ধারাই ছিল মুসলমানদের আলোকবর্তিক। তাদের তিলে তিলে গড়া অবদানেই আজ আমরা মুসলমান। সারা বিশ্বের বুকে আজ আমাদের পরিচিতি ইসলামপ্রিয় জাতি হিসেব।

আমাদের দেশের খানকাগুলো আজও বিলিয়ে যাচ্ছে ইসলামের সঠিক শিক্ষার আলো। মানুষের শারীরিক অসুস্ততায় চিকিৎসা দেয়ার জন্য আছে হাসপাতাল-ক্লিনিক; আর রূহানী চিকিৎসার কেন্দ্র হলো এই খানকাগুলো। একজন প্রকৃত মুসলমানের কাছে শারীরিক চিকিৎসার চেয়ে কোনো অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয় আত্মার চিকিৎসা। কারণ শারীরিক অসুস্ততায় শেষ পরিণতি মৃত্যু। কিন্তু আত্মার অসুস্ততায় পরিণতি হলো অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হওয়া। এদেশে শারীরিক চিকিৎসার সরকারি ব্যবস্থা থাকলেও গুরুত্ব নেই আত্মার চিকিৎসার। পার্থিব কোনো স্বীকৃতি ছাড়াও এদেশে যারা আত্মার চিকিৎসা করে যাচ্ছেন নিরন্তন, জাতির ওপর তাদের করুণা যে কত বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। খানকাকেন্দ্রিক এই ইসলাহী ধারা অব্যাহত না থাকলে আমাদের দেশেও স্খলন কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকত তা বলা মুশকিল। এখনো বেশ কিছু খানকা সজীব আছে বলেই ধর্মীয় মূল্যাবোধ, নৈতিক মানদণ্ড এবং ঈমানী স্পৃহার মতো অমূল্য সম্পদগুলো রক্ষিত আছে।

একজন সাধারণ মুসলমান, জীবনে কোনোদিন মাদরাসার বারান্দায়ও যাননি। এমন কোনো অপকর্ম নেই যা করেননি। দুর্দাণ্ড স্বভাবের সেই লোকটির হঠাৎ পরিবর্তন। তার চেহারায় সুন্নতি দাড়ি; মাথায় পাগড়ি; গায়ে সুন্নতি জামা। কোনো সরকারি-বেসরকারি অফিসের হয়ত তিনি বড় কর্মকর্তা। অনৈতিক কাজ নিজে করেন না; অধীনস্তদের করতেও দেন না। এক যুগের বেশি মাদরাসায় পড়ে যে আমল একজন আলেমের পক্ষে সম্ভব না এর চেয়ে বেশি আমল করেন তিনি। বাকি জীবন সহীহ ধারায় কাটানোর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা তার মধ্যে। এই যে পরিবর্তন এর পেছনে কীসের অবদান। দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনত অথবা হাক্কানী কোনো পীর-মাশায়েখের উসিলাতেই তার এই পরিবর্তন। এমন পরিবর্তন এক-দুইজনের নয়; হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষের। এই ধারা চলছে, চলবে কেয়ামত পর্যন্ত।

আমাদের দেশে খানকা আর পীর-মুরিদির প্রসঙ্গ এলে চলে আসে ভণ্ডামির কিছু চিত্র। রাজধানীসহ দেশের নানা প্রান্তে ইসলামের নামে এমন ভণ্ডামি দেখতে দেখতে মানুষ খানকা আর পীর-মুরিদি বললেই ভাবে ব্যবসা। তবে ধর্মের নামে অধর্মীয় কাজের গরম-বাজারেও হাক্কানি ধারার আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ এবং কিছু খানকা এখনো সক্রিয় রয়েছে। ইসলামের নামে সব তন্ত্রমন্ত্র ও ভণ্ডামির মোকাবেলায় তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। বৃহৎ আঙ্গিকে চরমোনাই ধারা সে কাজটি করে যাচ্ছে। হযরত মাওলানা ইসহাক রহ.-এর মাধ্যমে সূচিত এই ধারা হযরত মাওলানা ফজলুল করিম রহ.-এর মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে বিস্তৃতি লাভ করেছে। বিভিন্ন সময় ভণ্ড পীরদের মোকাবেলায় এদেশে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছেন চরমোনাইয়ের অনুসারীরা। ইসলামী আন্দোলন-সংগ্রাম, দাওয়াত, তালিম ও তাযকিয়ার সমন্বিত এই ধারার মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন এদেশের লাখো মুসলমান। বিশেষ করে, সাধারণ মুসলমানদেরকে দ্বীনের পথে আনার ক্ষেত্রে চরমোনাইয়ের কোনো বিকল্প নেই।

প্রতি বছর দুই দফায় বরিশালের চরমোনাইয়ে ছুটে যান সারা দেশের লাখ লাখ মুসলমান। ঈমানী স্পৃহা, ইসলাহী পাথেয়, দুনিয়া-আখেরাতে সফল হওয়ার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা লাভ করেন তারা। এছাড়াও সারা বছরই অব্যাহত থাকে চরমোনাই ধারার বহুমুখী এই আন্দোলন। দাওয়াত, তালিম, জিকির, তাযকিয়া সবই রয়েছে এই ধারায়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের অবদান স্বীকৃতিযোগ্য। অধঃপতিত সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্রান্তিকালে চরমোনাইয়ের বৈপ্লবিক এই ধারার কাছে দেশ, জাতি ও উম্মাহর প্রত্যাশা অনেক বেশি। তাই ধর্মীয়, রাজনীতি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে কাণ্ডারীহীন মুসলিম সমাজ তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে সঠিক ভূমিকাই আশা করে।

 

 

একনজরে বামুক

  • প্রতিষ্ঠাতা : মাওলানা সৈয়দ এসহাক রহ.
  • বর্তমান আমীর : মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম
  • সেক্রেটারি জেনারেল : খন্দকার গোলাম মাওলা
  • প্রতিষ্ঠার তারিখ : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২
  • কার্যকরী সদর দপ্তর : ৩৭/১ (৬ষ্ঠ তলা, ফারজানা টাওয়ার), নর্থব্রুক হল রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০

মুজাহিদ আবেদন ফরম

চরমোনাই তরিকার মুজাহিদ হওয়ার জন্য নিম্নোক্ত ফরমের মাধ্যমে আবেদন করুন

বই অর্ডার ফরম

মুজাহিদ নিবন্ধন ফরম

চরমোনাই তরিকার মুজাহিদগণের আবেদনের প্রেক্ষিতে নিম্নোক্ত ফরমের মাধ্যমে নিবন্ধন করুন

হালকায়ে যিকির কমিটির রেজিস্ট্রেশন ফরম

চরমোনাই তরিকার হালকায়ে যিকির কমিটি নিম্নোক্ত ফরমের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করুন