মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি রহ.
হযরত রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী (রহঃ);তাসাউফ, জিহাদ ও ইলমের এক কিংবদন্তি। ১৮২৯ সালের ১১ই মে ভারতের উত্তর প্রদেশের আন্তর্গত সাহারানপুর জেলার গাঙ্গুহ উপশহরে ইমাম আল্লামা রশিদ আহমদ জন্মগ্রহণ করেন। বংশগতভাবে তিনি ছিলেন প্রখ্যাত সাহাবী আবু আইয়ূব আব্দুল্লাহ (রা), ইমামে আজম আবু হানিফা (রহ্) এবং শায়খ আব্দুল কুদ্দস গাঙ্গুহী (রহ্) এর বংশধর।…
দায়িত্ব
আমীরুল মুজাহিদীন, বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটি
লিখিত বই
বই-১, বই-২, বই-৩
প্রতিষ্ঠাতা
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
উল্লেখযোগ্য কাজ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটি, চরমোনাই মাদরাসা
তার পিতার নাম মাওলানা হিদায়াত আহমদ (রহ্) এবং মায়ের নাম কারিমুন্নেসা (রহ্)। চার ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।
তিনি যখন ৭ বছর বয়সে উপনীত হন তখন থেকেই তাঁর একনিষ্ঠ খোদা প্রেমিক ও অনুপম ধর্মনিষ্ঠ প্রিয় জননীর নিকট পবিত্র কালাম পাকের শিক্ষা গ্রহণ শুরু করেন। ধী শক্তির পরম ও চরম উৎকর্ষতার ফলে তিনি অতি অল্প সময়েই পবিত্র কুরআন শেষ করেন।
এগারো বছর বয়সে তিনি মৌলবী মুহাম্মাদ বখস (রহঃ) এর কাছ থেকে পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতের অনুবাদ শুনেন। আয়াতটির ভাবার্থ হল, “বিচার দিবসে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনের নির্দেশে অপরাধীদেরকে এবং নেককারদেরকে পৃথক করে দেওয়া হবে।” এটা শোনার পর তিনি সারা রাত কাঁদতে কাঁদতে কাটিয়ে দেন । তাঁর এহেন অবস্থা দেখে তাঁর মা তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি উত্তরে বললেন,
“আম্মাজান! আমার এ কান্না শুধু এই ভয়ে যে, বিচার দিবসে আমি যেন অপরাধীদের অন্তর্ভূক্ত না হই।”
হযরত রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী বাল্যকাল থেকেই অধিকা মাত্রায় খোদাভীরু ছিলেন, তিনি দিন রাত্রির পুরো সময়টাই শুধু ইবাদত বন্দেগীতে কাটিয়ে দিতেন । তাঁর সময়কার বিশিষ্ট আলেমগণও তাঁর এই অভূতপূর্ব ও দুর্লভ সাধনা দেখে হতবাক হয়ে যেতেন।
তিনি প্রাথমিক শিক্ষা গাঙ্গুহতেই সমাপ্ত করেন। পরে তিনি ১৮৮৮ খ্রীষ্টাব্দে উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি যান । দিল্লীতে তিনি হযরত মাওলানা আব্দুল গণী (রহঃ) এবং মামলুক আলী (রহঃ) এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে তাঁদের আধ্যাত্মিক দরসে শামিল হয়ে যান। স্মরণ শক্তি অত্যন্ত প্রখর এবং ধী শক্তি অত্যন্ত তীক্ষ্ণ হওয়ার জন্য দর্শন ও তর্ক শাস্ত্রের কঠিন থেকে কঠিনতর গ্রন্থসমূহ অদ্যোপান্ত মুখস্ত করে ফেলেন।
তিনি দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা কাসেম নানুতুবী (রহঃ) এর সহপাঠি ছিলেন। একই সাথে তাঁরা লেখাপড়া করেন। তাঁদের উস্তাদগণ তাঁদের আল্লাহ প্রদত্ত বৈশিষ্টাবলীর ভূয়সী প্রসংশা করতেন ।
অবাধ জ্ঞান ও আসমানী ইলম ও খোদাভীতির নমূনা কাসেম নানুতুবী ও রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী একই সাথে হাজি ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (রহঃ) এর কাছে ইসলাহী বায়াত গ্রহণ করেন। হযরত মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী মাত্র ৪০ দিনের মাথায় স্বীয় পীরের কাছ থেকে খেলাফত লাভ করে ধন্য হন।
এই মহান প্রাপ্তির পাশাপাশি তিনি একজন বিশিষ্ট জমিদার ও প্রচুর সম্পদশালী ছিলেন। তিনি অঢেল সম্পত্তির অধিকারী ছিলেন। কিন্তু তাঁর এত সম্পত্তি থাকা সত্বেও তাঁর চলাফেরা ও পোষাক পরিচ্ছদ দেখে মনেই হোত না তিনি একজন এত সম্পত্তির মালিক। তিনি বিলাসিতা বিবর্জিত অনাড়ম্বর জীবন যাপন করতেন।
তিনি এত বড় আলেম হওয়া সত্ব্যেও অন্যান্য জগদ্বিখ্যাত ইসলামী মনীষীদের ন্যায় দুর্লভ জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার পাশাপাশি স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন সমর্থক ও নির্ভিক সংগ্রামী সিপাহসালার ছিলেন।
১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠে। আলেম সমাজ জেগে উঠে দিল্লী, মিরাঠ, কানপুর, লক্ষ্মৌ, রায়বেরেলী, বাংলায় যুদ্ধের দামামা বেজে উঠে। গোটা ভারতবর্ষে তখন শাহ ওয়ালিউল্লাহ এবং শাহ্ আব্দুল আজিজ এর ফতোয়ার উপর ভিত্তি করে স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়।
এই সময় থানাভবনের সন্নিকটে স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন হাজি ইমদাদুল্লাহ (রহ্)। হাজি সাহেবকে সরকার প্রধান, আল্লামা কাসেম নানুতভী কে প্রধান সেনাপতি এবং আল্লামা ইমাম রশিদ আহমদ কে প্রধান বিচারপতি করে সরকার গঠন করা হয়। ইংরেজদের সাথে এই বিদ্রোহী দেশপ্রেমিকদের শামেলীর ময়দানে ঐতিহাসিক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সে যুদ্ধে হাফেজ জামিন সাহেব (রহ্) সহ বহু আলেম শাহাদাত বরণ করেন। হাজি সাহেব বাধ্য হয়ে মক্কা শরিফে হিজরত করেন। আল্লামা কাসেম নানুতভী আত্নগোপন করেন। ইমাম রশিদ আহমদ কে গ্রেফতার করে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়।
ইংরেজ সৈন্যরা তাঁকে গ্রেফতার করে হাতে হাতকড়া পরিয়ে এবং পায়ে বেড়ি পরিয়ে মুজাফফর নগর কারাগারে নিয়ে যায় এবং সেখানে বন্দী করে রাখে। সেখানে ইংরেজরা তাঁর প্রতি ছয় মাস ধরে নির্যাতন চালায়। শত কষ্ট সহ্য করেও তিনি সেখানে অবসর থাকেননি।
বিভিন্ন শ্রেণীর কয়েদীদের মাঝে নিরলসভাবে দ্বীনি তা’লিম, ওয়াজ-নসীহত ইত্যাদি চালিয়ে গেছেন। ছয় মাসের এই কারাগারের জীবনে তিনি অবর্ণনীয় অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করেছেন।
কিন্তু ৬ মাস কারাভোগের পর তাকে বিশেষ ক্ষমার আওতায় মুক্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে কাসেম নানুতভী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নিজের এলাকায় ফিরে আসেন। অতঃপর রশিদ আহমদ এবং কাসেম নানুতভি মিলে সিদ্ধান্ত নেন যে ইংরেজদের সাথে এইভাবে যুদ্ধ করে জয়ী হওয়া সম্ভব নয়। এর জন্য সুসংঘটিত জনবল এবং রাজনৈতিক সংহতি প্রয়োজন।
অতঃপর স্বপ্নযোগে হযরত মুহাম্মদ (সা) কর্তৃক অর্দিষ্ট হয়ে ১৮৬৬ সালে আল্লামা রশিদ আহমদ এবং আল্লামা কাসেম নানুতভীর নেতৃত্বে উপমহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ ইসলামি বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম দেওবন্দের গোড়াপত্তন হয়।
মুক্তি দেওয়া হলেও অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠী মুরিদ ও মেহমানের ছদ্মবেশ ধারণ করে তাঁর পিছনে অসংখ্য গোয়েন্দা লাগিয়ে দেয়। তারা তাঁর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের পূর্ব পর্যন্ত এভাবেই তাঁর পেছনে লেগে।
তিনি সারাটি জীবন ইসলামের প্রচার-প্রসারের কাজই করে যান। প্রাণ নিবেদন করেন দেশ ও জাতির মুক্তি সংগ্রামে। এ সংগ্রাম করতে গিয়েই তিনি জেল জুলুম থেকে শুরু করে ইংরেজ দুঃশাসনের অকথ্য অবর্ণনীয় নির্যাতন সহ্য করেন।
মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী (রহঃ) বলেছিলেনঃ-
“ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা আমাদের বৈশিষ্ট। শঙ্কা ও বিপদের ঘোর অমানিশা আমাদেরকে বিন্দুমাত্রও ভীত সন্ত্রস্ত করতে পারবে না। পরাধীনতার প্রতিটি মুহুর্ত লাঞ্ছনা ও অপদস্ততার আয়না স্বরুপ। তাইতো আমার প্রতি যাদের শ্রদ্ধা ও ভক্তি আছে তাদের কেউই জিহাদের ফরজ আদায়ের শৈথিল্য প্রদর্শন করবে না।”
ইমাম গাঙ্গুহী একজন বড় মাপের দেশপ্রেমিক ছিলেন। তিনি বলতেন, দেশকে ভালোবাসা আমার ইমানের অংশ, এটা কেবল গাঙ্গুহের জন্য সীমাবব্ধ নয়, পুরো হিন্দুস্তান আমার নয়নমণি। তিনি উদারপন্থি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্ৰীতির পক্ষে ছিলেন। তিনি ভিন্ন ধর্মের অনুসারী এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ব্যাক্তিবর্গকে গালমন্দ না করার মর্মে ফতোয়া জারি করেন। বহু সংখ্যক অমুসলিম এর নিকট থেকে আধ্যাত্মিক উপদেশ লাভের চেষ্টা করেছেন। হিন্দু -মুসলিম উভয় সম্প্রদায় তাকে অত্যন্ত সম্মান করত।
ইমাম রশিদ আহমদ গাঙ্গুহীর ছাত্র, মুরিদ এবং খলিফাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন
সাইয়্যেদ হুসাইন আহমদ মাদানী (রহ্),
শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দী,
আল্লামা আশরাফ আলি থানভী (রহ্),
ক্বারী ইবরাহিম উজানভী,
আল্লামা খলিল আহমদ সাহারানপুরী (রহ্),
হযরতজী আল্লামা মুহাম্মদ ইলিয়াস (রহ্)।
ইসলামী জ্ঞানশাস্ত্রে ইমাম রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী সেই যুগের সবচেয়ে বিজ্ঞ আলেম ছিলেন। দীর্ঘ ৪৯ বছর ধরে হযরত গাঙ্গুহী তাজবিদ, হাদিস, উসুলে হাদিস, ফিকাহ, উসুলে ফিকাহ, তারিখ, সিরাত প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত ছিলেন।
বালা, বার্মা, সিন্ধু, মিরাঠ, পাঞ্জাব, গুজরাট, কাবুল, নেপাল, ভুটান সহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু জ্ঞানপিপাসু তার কাছে গভীর আধ্যাত্মিক জ্ঞানার্জনের জন্য আসতেন।
আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী ইমাম রশিদ আহমদ এর ইসলামী আইনশাস্ত্রের জ্ঞানকে আল্লামা ইবনে আবিদীন (ফতোয়ার শামী নামে বিশ্বখ্যাত ফতোয়ার কিতাব প্রণেতা) এর সাথে তুলনা করেন এবং ফকিহুন নফস (যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ফিকাহ শাস্ত্রবিদ) বলে উল্লেখ করেন।
ইমাম রশিদ আহমদ গাঙ্গুহীর লিখিত মূল্যবান ফতোয়া সমূহ ৪ খন্ডের কিতাবে ফতোয়ায়ে রশিদিয়া নামে প্রকাশিত হয়েছে। মাওলানা উবায়দুল্লাহ সিন্ধী ইমাম গাঙ্গুহীকে দেওবন্দি মানহাজের জনক বলে উল্লেখ করেন।
আল্লামা আশরাফ আলি থানভি তার লিখিত ‘মাআরেফে গাঙ্গুহী’ কিতাবে আল্লামা রশিদ আহমদ কে ‘দ্বিতীয় ইমাম আবু হানিফা’ বলে উল্লেখ করেন।
আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাক তার লিখিত ক্বারি ইব্রাহিম (রহ্) এর জীবনীতে উল্লেখ করেন যে ইমাম গাঙ্গুহীর ১ লক্ষাধিক হাদিস সনদ সহ মুখস্থ ছিল এবং হযরত গাঙ্গুহীকে তার যুগের ‘ইমাম বুখারি’ বলে সম্বোধন করা হতো।
বর্তমান যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা মুহাম্মাদ ত্বাকি আল উসমানি হযরত গাঙ্গুহীকে ‘ইমামে রব্বানী’ বলে উল্লেখ করেন।
রশিদ আহমদ গাঙ্গুহীর রচিত কিতাব সমূহের মধ্যে
ইরশাদুল মুলুক,
বারাহীনে কাতেয়া সাবিলুর রাশাদ,
তাকরীরে গাঙ্গুহি,
তাসফিয়াতুল কলুব,
জুবদাতুল মানাসিক,
আল কাওকাব আদ দারি,
আল লামি আদ দারারি,
হিদায়াতুশ শিয়া,
হিদায়াতুল মুতাদি,
লাতায়েফে রশিদিয়া,
ইরশালাদাতে গাঙ্গুহি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
হযরত রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী একজন উচ্চ মাপের আশেকে রাসুল ছিলেন এবং তিনি কখনো ওজু ছাড়া হাদিস পড়াতেন না।
রাসুলে কারিম (সা) এর পবিত্র জীবনাদর্শ প্রচার করাই ছিল তার জীবনের মূল লক্ষ্য। তিনি সারাজীবন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদাহ প্রচার করে গেছেন।
সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, মুজতাহিদ মুহাদ্দিসীনে কেরাম এবং যুগশ্রেষ্ঠ ইমামগণ কুরআন এবং সুন্নাহ অনুসরণের ক্ষেত্রে যেই পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন, ইমাম গাঙ্গুহী সেই পথকেই অনুসরণ করতেন। সুন্নাত এবং বিদয়াতের ক্ষেত্রে তিনি অত্যন্ত সচেতন ছিলেন।
তৎকালীন সময়ের বহুমুখী ফেতনা এবং ষড়যন্ত্র নির্মূল করার জন্য তিনি লেখালেখি, পুস্তিকা প্রকাশ ও প্রচার, বিতর্ক সভা, ওয়াজ মাহফিল, ফতোয়া প্রদান ও সঠিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে যুগশ্রেষ্ঠ সংষ্কারকের ভূমিকায় আবির্ভূত হন।
আধ্যাত্মিকতা ক্ষেত্রে ইমাম গাঙ্গুহী সেই যুগের সকলের মুরব্বি ছিলেন। কুরআন এবং সুন্নাহ সমর্থিত তাসাউফের প্রচার প্রসারে হযরত গাঙ্গুহী অনবদ্য ভূমিকা পালন করেন।
হাজি ইমদাদুল্লাহ তার ‘জিয়াউল কুলুব’ কিতাবে ইমাম রশিদ আহমদ গাঙ্গুহীকে জামেউল কামালাতিশ শরিয়ত ওয়াল তরিকত (শরিয়ত ও তরিকতের যাবতীয় পূর্ণতা হাসিলকারী) বলে উল্লেখ করেন এবং হিন্দুস্তানের বিরল ব্যাক্তিত্ব বলে সম্বোধন করেন।
মাওলানা সিদ্দিক আহমদ ‘মাকাতিবে রশিদীয়া’ কিতাবে উল্লেখ করেন যে তিনি কাশফ (আল্লাহ প্রদত্ত অন্তদৃষ্টি) এর মাধ্যমে আরশে আজিমে ইমাম গাঙ্গুহীর নাম মাখদুমুল আলম (সারা জগতের প্রিয়পাত্র) হিসেবে লেখা দেখেছেন এবং তিনি আরো বলেছেন যে ইমাম রশিদ আহমদ আপন যুগের কুতুবুল ইরশাদ এবং কুতুবুল আলম ছিলেন।
মাকতুবাত শরিফে শায়খ আহমাদ সিরহিন্দি উল্লেখ করেন যে, কোন যুগের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক পদবীধারী ব্যক্তিকে ‘কুতুবুল ইরশাদ’ বলা হয়।
এছাড়াও আল্লামা আশেকে এলাহী (রহ্) ‘তাজকিরাতুর রাশিদ’ কিতাবে ইমাম গাঙ্গুহি কে ‘হিন্দুস্থানের গাউস’ বলে উল্লেখ করেন।
শায়খুল হিন্দ আল্লামা মাহমুদ হাসান বন্দী (রহ্) তার লিখিত ‘মারসিয়ে রশিদ’ আহমদ নামক কিতাবে ইমাম গাঙ্গুহিকে ‘গাউসুল আজম’ এবং ‘সিদ্দিক’ বলে উল্লেখ করে।
আল্লামা আল্লাহ ইয়ার খান (রহ্) তার লিখিত ‘দালায়েলুস সুলুক দিল’ কিতাবে সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক স্তর বা মঞ্জিলে অধিষ্ঠিত ব্যাক্তিকে ‘সিদ্দিক’ বলে উল্লেখ করেন।
মাওলানা ফযলুর রহমান গঞ্জে মুরাদাবাদি (রহ্) ইমাম গাঙ্গুহি সম্পর্কে বলেন যে মাওলানা রশিদ আহমদ ইলমে মারেফাতের সমুদ্র পান করে হজম করে ফেলেছেন। মাওলানা গুফরান রাশিদি কীরানভী তার লিখিত কিতাবে হযরত গাঙ্গুহীকে হিজরী ত্রয়োদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আল্লামা আশেকে এলাহি তার লিখিত ‘তাজকিরাতুর রশিদ’ কিতাবে হযরত গাঙ্গুহী থেকে প্রকাশিত অসংখ্য কারামত উল্লেখ করেছেন।
এই মহান কর্মবীর ৪৯ বছর ধরে শিক্ষাদানে নিয়োজিত ছিলেন এবং এর পাশাপাশি লক্ষ লক্ষ মানুষকে মুরিদ করার মধ্য দিয়ে আল্লাহ প্রদত্ত এবং রাসুলে কারিম (সা) এর আনীত পবিত্র দ্বীনের শিক্ষা প্রচার করেছেন।
হযরত গাঙ্গুহী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মানহাজের মাধ্যমে আজ সারা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষের কাছে ইসলামের শান্তিময় জীবনব্যবস্থার শাশ্বত বাণী পৌছে গেছে। ১৯০৫ সালের ১১ ই আগস্ট, শুক্রবার জুম্মার অজানের পরে ইমাম সাইয়্যেদুনা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী (রহ্) ইন্তেকাল করেন।
একনজরে বামুক
-
প্রতিষ্ঠাতা : মাওলানা সৈয়দ এসহাক রহ.
-
বর্তমান আমীর : মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম
-
সেক্রেটারি জেনারেল : খন্দকার গোলাম মাওলা
-
প্রতিষ্ঠার তারিখ : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২
-
কার্যকরী সদর দপ্তর : ৩৭/১ (৬ষ্ঠ তলা, ফারজানা টাওয়ার), নর্থব্রুক হল রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০